বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংকের তালিকায় থাকা সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে দুর্বল বেসিক ব্যাংক। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেসরকারি খাতে সরকারি ব্যাংকের একীভূতকরণকে অসঙ্গতিপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন। এ অবস্থায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে ১০০% রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে এটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে সরকারী আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে আসছে, যা ২০১৫ সালে একটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছিল। বেসিক ব্যাংক একটি পাবলিক সেক্টরের ব্যাংক হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সাথে তার ব্যাঙ্কিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং বিপুল সংখ্যক অর্থ প্রদান করেছে। প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের মুনাফা, যা অন্যান্য ব্যাংকের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তারা জানতে পেরেছেন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার আলোচনা সম্পূর্ণ অসঙ্গত ও অযৌক্তিক।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বিডিবিএল ও রাকাব যখন আরও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলছে? একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বৈষম্য কাম্য নয়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্মারকলিপিতে বৈষম্যমূলক নীতি পরিহার করে বিডিবিএল ও রাকাবের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী বেসিক ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে বলা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ড. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, মালিকপক্ষ ব্যাংকটি একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেবে। কর্মীরা নয়। তবে ব্যাংকগুলো একত্রিত হলে দুর্বল ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
এর আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদ বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সুপারিশ করে। এরপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ নিয়ে দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।